স্বচ্ছলতার আশায় ওমানে গিয়ে নিঃস্ব দশ যুবক, পথে বসেছে পরিবার

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় পরিবারে স্বচ্ছলতার আশায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন দশ যুবক। এক বছরেও কোনো চাকরির ব্যবস্থা না হওয়ায় তাদের মধ্যে ছয়জন দেশে ফিরে এসেছেন। এতে ওই যুবকরাসহ তাদের পরিবার পথে বসেছে। উপজেলার আলমবিদিতর চৌধুরীপাড়া গ্রামে

রবিউল ইসলাম (৩৮) নামের এক ওমান প্রবাসীর খপ্পরে পড়ে তারা এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর গঙ্গাচড়া মডেল থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেন লেবু মিয়া, দুদু মিয়া ও মোশারফ হোসেন। এতে রবিউল ইসলাম (৩৮) ছাড়াও সহযোগিতা হিসেবে তার ভাই শফিকুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৪২) ও ভগ্নিপতি হামিদুল ইসলামের (৪৫) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর চৌধুরীপাড়া গ্রামে রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ওমানে থাকার কারণে তার প্রতি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে। তার প্রলোভনে পড়েন গ্রামের বেকার ও অশিক্ষিত যুবকেরা। কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধু রবিউলের সাজানো সিন্ডিকেটে আর উচ্চ বেতনে চাকরির আশ্বাসে লেবু মিয়া, মোশারফ হোসেন, দুদু মিয়া, আলম মিয়া, ফারজাহান আলী, জিল্লুর রহমান, পিউর মিয়া, মোকাররম হোসেন, নাজমুল ইসলাম ও মিঠু মিয়া ওমানে পাড়ি দেন। তাদের মাসে ৭০ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেয়ার লোভ দেখায়। গত এক বছর আগে তাদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সেখানে যাওয়ার পর তাদের কোনো কোম্পানিতে কাজ না দিয়ে বসায়ে রাখেন এবং কাজ দিবেন বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এভাবে তারা প্রায় এক বছর বেকার বসে থাকে। তাদের মধ্যে ছয়জন হতাশ হয়ে এখন দেশে ফিরে এসেছেন। চারজন এখনো আসেনি। এক পর্যায়ে রবিউলকে তারা কাজের জন্য চাপ দিলে রবিউল তার ছোট্ট মুদি দোকানটি গোপনে বিক্রি করে ৩ মাস আগে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

এ বিষয়ে ওমান ফেরত লেবু মিয়া বলেন, রবিউল আমার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। শুধু আমার সঙ্গেই এমন করে নাই, প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জনের সঙ্গে এ রকম করেছে। রবিউলের ফাঁদে পড়ে আজকে আমি সর্বস্বান্ত।

পাশের এলাকার দুদু মিয়া বলেন, ওমানে এমন দিন গেছে, আমরা সেখানে শুধু লবণ দিয়ে এক বেলা ভাত খেয়েছি। যখন আমরা দেখতেছি আর পারছি না তখন আমরা বাধ্য হয়ে বাড়িতে ফোন করি। বাড়ি থেকে ঋণ করে টাকা নিয়ে ফেরত এসেছি। বাড়িতে এখন লোকজন ঋণের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে রবিউলের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে রবিউলের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই তাদের ফ্রি ভিসায় বিদেশে নিয়ে গিয়ে কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখন তাদের মাঝে যে কি হলো আমি জানি না। কেন তারা সেখান থেকে চলে এসেছে তাও জানি না।

তার ভাই কোথায় সে বিষয় জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, আমাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে শুনেছি বাংলাদেশে আসার পর আবার নাকি ওমানে চলে গেছে। রবিউল ইসলামের পরিবারের অন্য সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

রংপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক আমেনা পারভীন বলেন, আমাদের কাছে এরকম কোনো অভিযোগ নেই। তবে থানায় অভিযোগ করেছে বলে জেনেছি।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটা শুনেছি।তবে অভিযোগকারীদের কাছে কোনো প্রমাণাদি নেই। এজন্য তাদের আদালতে মামলা করতে বলেছি। থানায় অভিযোগ করলে কিছুই হবে না।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

প্রবাসী স্বামীর দুই কোটি টাকা আত্নসাৎ, পরকীয়া প্রেমিক কারাগারে

রংপুর ব্যুরো: রংপুরে বিয়ের নামে প্রতারণা করে প্রবাসী স্বামীর...

শাশুড়ির সোনার গহনা ও নগদ অর্থ চুরি, জামিনে বেরিয়ে প্রাণনাশের হুমকি

রংপুর ব্যুরো: রংপুরের মাহিগঞ্জ ডিমলা কানুনগোটলা এলাকায় শাশুড়ির বাসা...

যশোরের তিন উপজেলায় ৩১ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে তিনটি...

রংপুরে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়

রংপুর ব্যুরো: সারাদেশের মতো রংপুর নগরীসহ জেলার কাউনিয়া ও...