পুলিশ কুপিয়ে গ্রেফতার এড়াতে পাঁচ তারকা হোটেলে বিএনপি নেতারা

বিএনপির অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মহাসড়কে নাশকতা, সহিংসতা ও পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাব, পুলিশকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশকে কুপিয়ে সহিংসতা, নাশকতা করে ৩১ অক্টোবর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থান নেয় তারা। নাশকতা সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ইন্ধনদাতা হিসেবে আর কারা কারা জড়িত আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, ৩১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা সৃষ্টিকারী এবং সহিংসতাকারীদের চিহ্নিত করতে আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে হামলাকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করতে কাজ শুরু হয়। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় র‌্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ভোরে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হোটেল ওয়েস্টিনে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশকে কুপিয়ে জখম এবং নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং পদধারী নেতা। গ্রেফতারকৃতরা হলো, জুয়েল আহম্মেদ (৫২), ইউসুফ আলী ভুইয়া (৬৯), মাসুম শিকারী (৪৫), হাবিবুর রহমান সেলিম (৪৮), শফিউদ্দিন ভুইয়া (৫১), শফিউদ্দিন ভুইয়া (৪৮),  মাসুকুল ইসলাম রাজিব (৫৩),  শাকিল মিয়া (৪০), আরমান মোল্লা (৪৬) ও হাবিবুর রহমান (৫৪)।

হোটেল থেকে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে আটকের বিষয় জানতে হোটেল ওয়েস্টিনের রিজার্ভেশন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সাথী নামে এক নারী বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে কোনো ক্লায়েন্টের তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাব জানায়, ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতেই এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টার্গেট করেই তারা নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছিলো। যার ধারাবাহিকতায় পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশকে কোপানোর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পেতে ইন্ধনদাতা সেই বিএনপি নেতার মদদে গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেলে ঠাঁই হয় তাদের। ৩১ অক্টোবর ঘটনা ঘটিয়েই পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে সটকে গিয়ে রাজধানীতে ঢুকে পড়ে এবং গুলশানে গিয়ে অবস্থান নেয় তারা। তারা ভেবেছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান নিলেও পাঁচ তারকা হোটেলে কোরো ধরনের অভিযান পরিচালনা করবে না, বা তাদের খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না। এছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলে কিছু দিন আয়েশী জীবনযাপন করা যাবে। এসব কারণেই বিএনপির সেই নেতার ইন্ধন এবং আর্থিক মদদের কারণে ৩১ অক্টোবর রাত থেকে তারা হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থান শুরু করে।

র‌্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃত ১০ জন সরাসরি পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করার সঙ্গে জড়িত। হোটেলে অবস্থান করেও তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা করে আসছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পাঁচ তারকা হোটেলে নাশকতাকারীদের কারা অবস্থান করার সুযোগ করে দিয়েছিলো, কারা রুম বুকিং করিয়ে দিয়েছিলো, কারা অর্থ দিয়েছিলো এসব বিষয় গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতেই পাঁচ তারকা হোটেলকে বেছে নেয় তারা। গ্রেফতারকৃতদের দিয়ে নাশকতা করানোর পাশাপাশি পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করতে সহায়তাকারীদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

দুইদিনে সোনার দাম বাড়লো ১৭৮৫ টাকা

ঢাকা অফিস: টানা আট দফায় কমানোর পর দেশের বাজারে...

খুলনাসহ ৮ বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি

ঢাকা অফিস: খুলনাসহ দেশের ৮ বিভাগের ওপর দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে...

বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন বিজিপির আরো ৮৮ সদস্য

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার: জেলার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে নতুন করে...

সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে রিট

ঢাকা অফিস: পরিবেশ রক্ষায় রাজধানী সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধের...