দেশে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাই জনস্বাস্থ্যকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত তামাক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
৯ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন জনপরিসর ও গণপরিবহণে প্রতিদিন প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্চেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর ১২ লাখ মানুষ শুধু ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন। তাই বিদ্যমান আইনের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি আলোকে সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
দেশের প্রখ্যাত ১২১ জন চিকিৎসক বলেছেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথে তামাক জড়িত।
গ্রোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের (গ্যাটস) রিপোর্ট অনুযায়ী তামাক ব্যবহারকারীর প্রায় অর্ধেক মারা যায় তামাকের কারণে।
তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি, বা ফুসফুসের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ৫৭ ভাগ বেশি এবং অন্যান্য ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯ ভাগ বেশি। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। তামাক নিরব ঘাতকের কাজ করছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের তথ্যে বলা হয়েছ, তামাকের ধোঁয়ায় ৭ হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে নিকোটিন, কার্বন-মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন, সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া ও পোলানিয়ামসহ ২১০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উল্লেখযোগ্য। ৭০টি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যার প্রভাবে ক্যানসার হতে পারে। তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, এই তামাকের কারণে বছরে মারা যাচ্ছে ৫৭ হাজার মানুষ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে আলো ৪ লাখ। দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। এর মধ্যে নারী ধুমপায়ীও আছে। পুরুষ ধুমপায়ীদের সবাই প্রকাশ্যে ধুমপান করে। এ কারণে যারা ধুমপান করে না তারা পরোক্ষভাবে ধুমপানের ক্ষতিকর প্রভাবে পড়ে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ।
দেশে তামাক বিরোধী আইন আছে। কিন্তু সে আইন অমান্য করে আমরা কোনোক্রমেই নিজেদেরকে সভ্য জাতি দাবি করতে পারিনে। আমরা আশা করবো জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ হোক। আমরা আইন মান্যকারী সভ্য জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই।
স্বাআলো/এসএস