সম্পদকীয়: অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান মানুষের জীবনের পাঁচটি মৌলিক অধিকার। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় ইতোমধ্যে আশ্রয়হীনদের বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। অন্য অধিকারগুলোর মধ্যে চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনো সংকট রয়েছে। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক সঙ্কট তীব্র।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিউএইচও) আদর্শ মান অনুযায়ী, প্রতি এক হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন চিকিৎসক থাকতে হবে। অথচ দেশে ৯ হাজার ৪৩৩ জন মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেলায় এ অনুপাত ১:১১,৬০৫। গ্রামীণ জনপদে সরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে অবকাঠামো ঠিক থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকছে। নিয়মিত চিকিৎসক না বসায় ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চান না গ্রামের লোকজন। স্বাস্থ্যসেবা পেতে তাদের ছুটতে হয় শহরে।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী, ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র্রের প্রতিটিতে একজন করে চিকিৎসা কর্মকর্তা, উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (এসএসিএমও), ফার্মাসিস্ট, এমএলএসএস/অফিস সহায়ক ও মিডওয়াইফ (নার্স) থাকার কথা। এই পাঁচটি পদ ছাড়াও কেন্দ্রগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের এফডবিউভি (পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা) ও আয়ার দুইটি পদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে জনবল অনেক কম। কোনো কোনোটিতে বাস্তবে দুই-একজন ছাড়া আসলে আর কেউ কর্মরত নেই।
গ্রামাঞ্চলে সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়নে অবস্থিত উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় গ্রামীণ জনপদের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা। সেখানে থাকতে চান না কোনো চিকিৎসক। সরকারি চাকরি পাওয়ার পর পদায়ন করা এলাকায় দুই বছর কাজ করা চিকিৎসকদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২৬ শতাংশ চিকিৎসক তা করেন না। ৬৫ শতাংশ চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নেয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রামে কাজ করতে পারেন না। ৪১ শতাংশ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন পারিবারিক কাজে।
গ্রামের মানুষদের মতো আমরাও মনে করি, প্রতিটি ইউনিয়নে স্থাপিত সরকারি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকে। অন্ততপক্ষে একজন চিকিৎসক নিয়মিত না হলেও সপ্তাহে অন্তত দুই -তিন দিন যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা দেন তাহলে ওই এলাকার সেবার চিত্র পাল্টে যেতে পারে। সাধারণ মানুষকে কষ্ট করে আর দূরের হাসপাতালে গিয়ে সময় অর্থ নষ্ট করতে হবে না। সেই সাথে ভুল বা অপচিকিৎসার শিকারও হতে হবে না তাদের।
স্বাআলো/এস